পরিবেশ এবং বাস্তুতন্ত্র

অষ্টম শ্রেণি (মাধ্যমিক) - বিজ্ঞান - NCTB BOOK

আমাদের চারপাশের সবকিছু নিয়েই আমাদের পরিবেশ তা তোমরা জানো। আরও জানো, একটি স্থানে যে সকল জড়বস্তু ও জীব থাকে সেগুলো নিয়েই সেখানকার পরিবেশ গড়ে উঠে। তোমরা নিশ্চয়ই লক্ষ করেছ, এই ভূমণ্ডলে বিভিন্ন পরিবেশ রয়েছে। এসব পরিবেশকে আমরা স্বাদু পানি, লোনা পানি ও স্থল এই প্রধান তিনটি ভাগে ভাগ করতে পারি। এই তিন রকমের পরিবেশের প্রত্যেকটিতে স্বতন্ন ধরনের অজীব ও জীব উপাদান থাকে। এসব অৰ্জীৰ ও জীব উপাদানসমূহ একে অপরের সাথে সম্পর্কযুক্ত। তোমরা জানো, পরিবেশের জীব উপাদানসমূহের মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের উদ্ভিদ ও প্রাণী। জীবন ধারণের জন্য এসকল উদ্ভিদ ও প্রাণী একে অপরের সাথে সম্পর্কযুক্ত।

এ অধ্যায় পাঠ শেষে আমরা-
   • বাস্তুতন্ত্রের উপাদান ও প্রকারভেদ ব্যাখ্যা করতে পারব;
   • খাদ্যশৃঙ্খল ও খাদান ব্যাখ্যা করতে পারব;
   • বাস্তুতন্ত্রে শক্তিপ্রবাহ ব্যাখ্যা করতে পারব;
   • পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় বাস্তুতন্ত্রের ভূমিকা বিশ্লেষণ করতে পারব;
   • জীবে বাস্তুতন্ত্রের অবদান উপলব্ধি করব এবং সুরক্ষার অন্যদের সচেতন করতে পারব।

Content added || updated By

ফাইটোপ্লাঙ্কটন→  ছোট মাছ →  জু-প্লাঙ্কটন

ফল → পতঙ্গ → পাখি

ঘাস → কচ্ছপ → ছোটমাছ

ক্ষুদিপানা → মাছ → শামুক

ফাইটোপ্ল্যাংকটন
জু-প্ল্যাঙ্কটন
ব্যাকটেরিয়া
কীটপতঙ্গ

পৃথিবীর বিভিন্ন পরিবেশে বিভিন্ন জীব বসবাস করে। প্রতিটি বাসস্থানের বিভিন্ন এলাকায় জলবায়ু, আবহাওয়া ও অন্যান্য অজীব এবং জীব উপাদানের মধ্যে প্রচুর পার্থক্য দেখা যায়। এসব পার্থক্যের কারণে পৃথিবীজুড়ে স্থানভেদে বিচিত্র সব জীবের বসতি। বনজঙ্গলে তুমি যে ধরনের জীব দেখবে, পুকুরে বসবাসরত জীব তাদের থেকে ভিন্ন। এসব পরিবেশের জীব ও অজীব উপাদানের মধ্যে রয়েছে এক নিবিড় সম্পর্ক। আবার একটি পরিবেশের উদ্ভিদ ও প্রাণী জীবন ধারণের জন্য একে অন্যের উপর নির্ভরশীল। এভাবে যে কোনো একটি পরিবেশের অজীব এবং জীব উপাদানসমূহের মধ্যে পারস্পরিক ক্রিয়া, আদান-প্রদান ইত্যাদির মাধ্যমে পরিবেশে যে তন্ত্র গড়ে উঠে তাই বাস্তুতন্ত্র নামে পরিচিত।

পরিবেশ পর্যবেক্ষণ করলে দেখতে পাবে বাস্তুতন্ত্রের সকল উপাদানের মধ্যে ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া চলছে। তোমার বাড়ি অথবা বিদ্যালয়ের কাছের বাগান একটি ছোট বাস্তুতন্ত্রের উদাহরণ।

Content added || updated By

বাস্তুতন্ত্রের উপাদান

তোমরা জেনেছ অজীব এবং জীব এই দুটি প্রধান উপাদান নিয়ে বাস্তুতন্ত্র গঠিত।

অজীব উপাদান : বাস্তুতন্ত্রের প্রাণহীন সব উপাদান অজীব উপাদান নামে পরিচিত। এই অজীব উপাদান আবার দুই ধরনের। (ক) অজৈব বা ভৌত উপাদান এবং (খ) জৈব উপাদান। অজৈব উপাদানের মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন প্রকার খনিজ লবণ, মাটি, আলো, পানি, বায়ু, তাপ, আর্দ্রতা ইত্যাদি। সকল জীবের মৃত ও গলিত দেহাবশেষ জৈব উপাদান নামে পরিচিত। পরিবেশের জীব উপাদানের বেঁচে থাকার জন্য এসব অজৈব ও জৈব উপাদান অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।

 

জীব উপাদান : পরিবেশের সকল জীবন্ত অংশই বাস্তুতন্ত্রের জীব উপাদান। বাস্তুতন্ত্রের সকল জীব ও অজীব : উপাদানের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক রয়েছে তা তোমরা প্রথম পাঠে জেনেছ। বাস্তুতন্ত্রকে কার্যকরী রাখার জন্য এ সকল জীব যে ধরনের ভূমিকা রাখে তার উপর ভিত্তি করে এসব জীব উপাদানকে (ক) উৎপাদক, (খ) খাদক এবং (গ) বিযোজক এ তিন ভাগে ভাগ করা হয়।

(ক) উৎপাদক : সবুজ উদ্ভিদ যারা নিজেদের খাদ্য নিজেরা তৈরি করতে পারে তারা উৎপাদক নামে পরিচিত। যারা উৎপাদক তারা সূর্যের আলোর উপস্থিতিতে সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ায় শর্করা জাতীয় খাদ্য তৈরি করে। যার উপর বাস্তুতন্ত্রের অন্যান্য সকল প্রাণী প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে নির্ভরশীল।

(খ) খাদক বা ভক্ষক : যে সকল প্রাণী উদ্ভিদ থেকে পাওয়া জৈব পদার্থ খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করে বা অন্য কোনো প্রাণী খেয়ে জীবন ধারণ করে তারাই খাদক বা ভক্ষক নামে পরিচিত। বাস্তুতন্ত্রে তিন ধরনের খাদক রয়েছে।

প্রথম স্তরের খাদক : যে সকল প্রাণী উদ্ভিদভোজী তারা প্রথম স্তরের খাদক। এরা তৃণভোজী নামেও পরিচিত। তৃণভোজী প্রাণীদের মধ্যে রয়েছে ছোট কীটপতঙ্গ থেকে শুরু করে অনেক বড় প্রাণী। যেমন— গরু, ছাগল ইত্যাদি।

দ্বিতীয় স্তরের খাদক : যারা প্রথম স্তরের খাদকদেরকে খেয়ে বাঁচে। যেমন- পাখি, ব্যাঙ, মানুষ ইত্যাদি। এরা মাংসাশী বলেও পরিচিত।

তৃতীয় স্তরের খাদক বা সর্বোচ্চ খাদক : যারা দ্বিতীয় স্তরের খাদকদের খায়। যেমন- কচ্ছপ, বক, ব্যাঙ, মানুষ ইত্যাদি। এদের মধ্যে কোনো কোনো প্রাণী আবার একাধিক স্তরের খাবার খায়। এদেরকে বলা হয় সর্বভুক। আমরা যখন ডাল, ভাত, আলু ইত্যাদি খাই, তখন আমরা প্রথম স্তরের খাদক। আবার আমরা যখন মাছ, মাংস খাই, তখন আমরা দ্বিতীয় বা তৃতীয় স্তরের খাদক।

(গ) বিযোজক : এরা পচনকারী নামেও পরিচিত। পরিবেশে কিছু অণুজীব আছে, বিশেষ করে ব্যাকটেরিয়া ও ছত্রাক যারা মৃত উদ্ভিদ ও প্রাণীর দেহের উপর ক্রিয়া করে। এসময় মৃত উদ্ভিদ ও প্রাণীদেহে রাসায়নিক বিক্ৰিয়া ঘটে। ফলে মৃতদেহ ক্রমশ বিযোজিত হয়ে নানা রকম জৈব ও অজৈব দ্রব্যাদিতে রূপান্তরিত হয়। এসব দ্রব্যের কিছুটা ব্যাকটেরিয়া ও ছত্রাক নিজেদের খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করে। মৃতদেহ থেকে তৈরি বাকি খাদ্য পরিবেশের মাটি ও বায়ুতে জমা হয়। যা উদ্ভিদ পুনরায় ব্যবহার করে। এভাবে প্রকৃতিতে অজীব ও জীব উপাদানের ক্রিয়া প্রতিক্রিয়া হয়ে বাস্তুসংস্থান সচল থাকে।

Content added || updated By

বাস্তুতন্ত্রের প্রকারভেদ

প্রাকৃতিক পরিবেশে দু'ধরনের বাস্তুতন্ত্র রয়েছে। স্থলজ এবং জলজ বাস্তুতন্ত্র। তোমরা এ পাঠে স্থলজ বাস্তুতন্ত্র এবং জলজ বাস্তুতন্ত্র সম্পর্কে জানবে।

স্থলজ বাস্তুতন্ত্র
এ ধরনের বাস্তুতন্ত্র আবার বিভিন্ন ধরনের হতে পারে। যেমন- বনভূমির বাস্তুতন্ত্র, মরুভূমির বাস্তুতন্ত্র ইত্যাদি। বনভূমির বাস্তুতন্ত্রের উদাহরণ হিসেবে আমরা বাংলাদেশের বনভূমি অঞ্চলের কথা বলতে পারি। বাংলাদেশের বনভূমি অঞ্চলকে প্রধান দুটি অঞ্চলে ভাগ করা হয়। (ক) সিলেট ও পার্বত্য চট্টগ্রামের বনাঞ্চল এবং (খ) খুলনার সমুদ্র উপকূলবর্তী সুন্দরবন অঞ্চল। নিচে সুন্দরবনের বাস্তুতন্ত্র সংক্ষেপে আলোচনা করা হলো। সুন্দরবনের বনভূমি অন্যান্য অঞ্চলের বনভূমি থেকে আলাদা বৈশিষ্ট্যের। খুলনা জেলার দক্ষিণে সমুদ্র উপকূল থেকে ভিতরের দিকে এ অঞ্চল বেশ কয়েক মাইল পর্যন্ত বিস্তৃত। জোয়ার-ভাটার কারণে এ অঞ্চলের মাটির লবণাক্ততা বেশি, কাজেই লবণাক্ত পানি সহ্য করার ক্ষমতাসম্পন্ন উদ্ভিদই এ বনাঞ্চলে জন্মে। সুন্দরবনের বনাঞ্চল ম্যানগ্রোভ বন নামে পরিচিত। এ বনের মাটি বেশ কর্দমাক্ত। কাজেই এর ভিতর দিয়ে সহজে বাতাস চলাচল করতে পারে না। তাই এখানকার উদ্ভিদের মূল মাটির নিচে না গিয়ে খাড়াভাবে মাটির উপরে উঠে আসে। এসব মূলের আগায় অসংখ্য ছিদ্র থাকে। যার সাহায্যে উদ্ভিদ শ্বসনের জন্য বাতাস থেকে সরাসরি অক্সিজেন গ্রহণ করে। এ বনের উল্লেখযোগ্য উদ্ভিদ হলো সুন্দরী, গরান, গেওয়া, কেওড়া, গোলপাতা ইত্যাদি। এরা এ বনের উৎপাদক। পোকামাকড়, পাখি, মুরগি, হরিণ এ বনের প্রথম স্তরের খাদক। বানর, কচ্ছপ, সারস ইত্যাদি দ্বিতীয় স্তরের খাদক। এ বনের তৃতীয় স্তরের খাদকদের মধ্যে রয়েছে বাঘ, শূকর ইত্যাদি। এ সবের মধ্যে শুকর সর্বভুক। এ বনের উল্লেখযোগ্য প্রাণী রয়েল বেঙ্গল টাইগার, চিতা বাঘ, বানর, চিত্রল হরিণ, বন্য শূকর, কুমির, নানা ধরনের সাপ, পাখি এবং কীটপতঙ্গ। 

 

জলজ বাস্ত্রুতন্ত্র

জলজ বাস্তুতন্ত্র প্রধানত ভিন ধরনের। যথা-
১. পুকুরের বাস্তুতন্ত্র
২. নদ-নদীর বাস্তুতন্ত্র
৩. সমুদ্রের বাস্তুতন্ত্র

চিত্র ১৪.১ : একটি পুকুরের বাস্তুতন্ত্র

তোমাদের বোঝার সুবিধার্থে এখানে একটি পুকুরের বাস্তুতন্ত্র সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করা হলো। স্বাদু পানির একটি ছোট পুকুর জলজ বাস্তুসংস্থানের একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ উদাহরণ। পুকুরে রয়েছে অজীব ও জীব উপাদান। অজীব উপাদানের মধ্যে পুকুরে রয়েছে পানি, দ্রবীভূত অক্সিজেন, কার্বন ডাইঅক্সাইড এবং কিছু জৈব পদার্থ। এসব উপাদান জীব সরাসরি ব্যবহার করতে সক্ষম। জীব উপাদানের মধ্যে আছে উৎপাদক, প্রথম স্তরের খাদক, , দ্বিতীয় স্তরের খাদক, তৃতীয় স্তরের খাদক ও নানা রকমের বিযোজক। পুকুরের বাস্তুসংস্থানের উৎপাদক হচ্ছে মানা ধরনের ভাসমান ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র আণুবীক্ষণিক উদ্ভিদ যারা ফাইটোপ্লাঙ্কটন নামে পরিচিত। ভাসমান বড় উদ্ভিদের মধ্যে রয়েছে কচুরীপানা, শাপলা ইত্যাদি। তাসমান ক্ষুদ্র উদ্ভিদ যেমন পুকুরের পানিতে রয়েছে তেমনি রয়েছে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র আণুবীক্ষণিক প্রাণী। এরা জু-প্লাঙ্কটন নামে পরিচিত। বিভিন্ন প্রকার জ কীটপতঙ্গ, ছোট মাছ, ঝিনুক, শামুক ইত্যাদি যারা উৎপাদকদের খায় তারা প্রথম র খাদক। আবার এদেরকে যারা খায় আরও একটু বড় মাছ, ব্যাঙ এরা দ্বিতীয় স্তরের খাদক। এদেরকে আবার যারা খায় যেমন কচ্ছপ, বক, সাপ এরা তৃতীয় স্তরের খাদক। পুকুরে মৃত জীবের উপর ব্যাকটেরিয়া, ছত্রাক বিযোজকের কাজ করে। বিবোজিত দ্রব্যাদি আবার পুকুরের উৎপাদক খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করে।

Content added || updated By

খাদ্য শৃঙ্খन ও খাদ্যজান

তোমরা জেনেছ বাস্তুতন্ত্রে কোনো জীবই এককভাবে বেঁচে থাকতে পারে না। বেঁচে থাকার জন্য একে অন্যের উপর বিভিন্নভাবে নির্ভরশীল। জীবের বেঁচে থাকার জন্য তার চারপাশের সমস্ত উপাদান নানাভাবে প্রভাবাম্বিত করে।

 

খাদ্য শৃঙ্খল
এ পৃথিবীতে সকল শক্তির উৎস সূর্যের আলো। বাস্তুতন্ত্রের উৎপাদক হচ্ছে সবুজ উদ্ভিদ। তোমরা জেনেছ প্রাথমিক স্তরের খাদক খাদ্যের জন্য উৎপাদকের উপর নির্ভরশীল। আবার দ্বিতীয় স্তরের খাদক নির্ভরশীল প্রাথমিক স্তরের খাদকের উপর। তৃতীয় স্তরের খাদক খায় দ্বিতীয় স্তরের খাদকদেরকে। এভাবে একটি বাস্তুতন্ত্রে সকল জীব (উদ্ভিদ ও প্রাণী) পুষ্টি চাহিদার দিক থেকে ধারাবাহিকভাবে সংযুক্ত। ফলে গড়ে উঠে খাদ্যশৃঙ্খল। তাহলে দেখা যাচ্ছে উদ্ভিদ উৎস থেকে শুরু করে বিভিন্ন প্রাণীর মধ্যে একে অন্যকে খাওয়ার মাধ্যমে শক্তির যে স্থানান্তর ঘটে তাই খাদ্যশৃঙ্খল।

যেমন: ঘাস – পতঙ্গ ব্যাঙ্ক → সাপ → ঈগল ।

 

খাদ্যজাল

বাস্তুতন্ত্রে অসংখ্য খাদ্যশৃঙ্খল থাকে তা নিশ্চয়ই দেখেছ। এসব খাদ্যশৃঙ্খল কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয় ৷ বরং বিভিন্ন খাদ্যশৃঙ্খল পরস্পর সম্পর্কযুক্ত। খাদ্যশৃঙ্খলের এ ধরনের সংযুক্তিকে খাদ্যজাল বলা হয়।

চিত্র ১৪.২ : খাদ্যজাল
Content added || updated By

বাস্তুতন্ত্রে শক্তি প্রবাহ

তোমরা জেনেছ পৃথিবীতে বসবাসকারী সকল জীবই সূর্যের আলোর উপর নির্ভরশীল। অর্থাৎ জীবজগতের সকল শক্তির মূল উৎস সূর্য। সূর্যের যত আলো পৃথিবীতে আসে তার মাত্র শতকরা ২ ভাগ সবুজ উদ্ভিদ সালোকসংশ্লেষণের মাধ্যমে কাজে লাগিয়ে শর্করা জাতীয় খাদ্য তৈরি করে। সালোকসংশ্লেষণের মাধ্যমে প্রাকৃতিক প্রক্রিয়ায় সৌরশক্তি রাসায়নিক শক্তিতে রূপান্তরিত হয়। এ প্রক্রিয়া চলার সময় সবুজ উদ্ভিদ বিভিন্ন ধরনের প্রাকৃতিক যৌগ, যেমন- পানি, নাইট্রোজেন, কার্বন ডাইঅক্সাইড, আয়রন, সালফার ইত্যাদি ব্যবহার করে। এ প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই জড় ও জীবজগতের মধ্যে সংযোগ সৃষ্টি হয়।

চিত্র ১৪.৩ : বাস্তুতন্ত্রে শক্তির একমুখী এবং পদার্থের চক্রাকার প্রবাহ

সবুজ উদ্ভিদের মাধ্যমেই সৌরশক্তি রাসায়নিক শক্তিতে রূপান্তরিত হয়। এই রাসায়নিক শক্তি বিভিন্ন প্রাণীতে খাদ্যশৃঙ্খলের মাধ্যমে স্থানান্তরিত হয়। উৎপাদক থেকে আরম্ভ করে সর্বোচ্চ খাদক পর্যন্ত শক্তি রূপান্তরের সময় প্রতিটি ধাপে শক্তি হ্রাস পেতে থাকে। তাহলে দেখা যাচ্ছে উৎপাদক থেকে শক্তি যায় তৃণভোজী প্রাণীর দেহে। সেখান থেকে দ্বিতীয় স্তরের খাদক এবং দ্বিতীয় স্তরের খাদক থেকে যায় সর্বোচ্চ খাদকে। এভাবেই শক্তি প্রবাহ চলতে থাকে। প্রতি স্তরে শক্তি হ্রাস পেলেও বিযোজক যখন বিভিন্ন মৃত জীবে, বর্জ্য পদার্থে বিক্রিয়া ঘটায় তখন অজৈব পুষ্টিদ্রব্য পরিবেশে মুক্ত হয়ে পুষ্টিভান্ডারে জমা হয় ; যা আবার সবুজ উদ্ভিদ কাজে লাগায়। এ থেকে বুঝতে পারা যায় যে বাস্তুসংস্থানে পুষ্টিদ্রব্য চক্রাকারে প্রবাহিত হয় এবং শক্তিপ্রবাহ একমুখী।

Content added By

পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় বাস্তুতন্ত্রের ভূমিকা

পরিবেশে বাস্তুতন্ত্র একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ একক। যেকোনো পরিবেশে বাস্তুতন্ত্র মোটামুটিভাবে স্বনিয়ন্ত্রিত। প্রকৃতিতে যেকোনো জীবের সংখ্যা হঠাৎ করে বেশি বাড়তে পারে না। প্রতিটি জীব একে অন্যের উপর নির্ভরশীল। খাদ্য শৃঙ্খলের মাধ্যমে এরা পরস্পর পরস্পরের সাথে সম্পর্কযুক্ত। সহজে এর কোনো একটি অংশ একেবারে শেষ হতে পারে না। কোনো একটি পরিবেশে বিভিন্ন স্তরের জীব সম্প্রদায়ের সংখ্যার অনুপাত মোটামুটিভাবে অপরিবর্তিত থাকে। পরিবেশে বিভিন্ন পরিবর্তন ঘটলেও বহু দিন পর্যন্ত প্রাকৃতিক ভারসাম্য বজায় থাকে। এসো একটি উদাহরণের সাহায্যে আমরা এ বিষয়টি বুঝতে চেষ্টা করি। মনে কর কোনো একটি বনে বাঘ, হরিণ, শূকর ইত্যাদি বাস করে। এ বনে বাঘের খাদ্য হলো হরিণ ও শূকর। হরিণ ও শূকরের সংখ্যা বেড়ে গেলে বাঘের সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে। কারণ বাঘ প্রচুর খাদ্য পাবে। আবার বাঘের সংখ্যা বৃদ্ধি পেলে হরিণ ও শূকরের সংখ্যা কমে যাবে। হরিণ ও শূকরের সংখ্যা কমে গেলে বাঘের খাদ্যাভাব দেখা দিবে। ফলে বাঘের সংখ্যাও কমে যাবে। আবার বাঘের সংখ্যা যদি কমে যায় তবে হরিণ ও শূকরের সংখ্যা বেড়ে যাবে। এভাবে হ্রাস-বৃদ্ধির ফলে একটি এলাকার বাস্তুতন্ত্রের ভারসাম্য প্রাকৃতিকভাবে নিয়ন্ত্রিত হয়।

কাজ : পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় বাস্তুতন্ত্রের ভূমিকা সম্পর্কে প্রতিবেদন তৈরি করো।
দল গঠন করো। যেকোনো একটি পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় বাস্তুতন্ত্রের ভূমিকা সম্পর্কে প্রতিবেদন তৈরি করে শ্রেণিতে উপস্থাপন করো।

নতুন শব্দ : বাস্তুতন্ত্র, খাদ্যশৃঙ্খল, খাদ্যজাল, ফাইটোপ্লাঙ্কটন, জু-প্লাঙ্কটন 

 

এ অধ্যায় পাঠ শেষে যা শিখলাম 

- যেকোনো একটি পরিবেশের জড় এবং জীব সম্প্রদায়ের মধ্যে আদান-প্রদান, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও সহযোগিতার মাধ্যমে গড়ে উঠে বাস্তুতন্ত্র।

- অজীব এবং জীব এই দুটি প্রধান উপাদান নিয়ে বাস্তুতন্ত্র গঠিত। 

- উদ্ভিজ্জ উৎস থেকে শুরু করে বিভিন্ন প্রাণীর মধ্যে একে অন্যকে খাওয়ার মাধ্যমে শক্তির যে স্থানান্তর ঘটে তাই খাদ্যশৃঙ্খল।

- প্রকৃতিতে বিভিন্ন খাদ্যশৃঙ্খল পরস্পর সম্পর্কযুক্ত। খাদ্যশৃঙ্খলের এ ধরনের সংযুক্তি খাদ্যজাল নামে পরিচিত।

Content added || updated By

আরও দেখুন...

Promotion